“পানি বীজতলাকে ডুবায় না কৃষক বীজতলাকে ডুবায়?”
প্রশ্নটি অনেকের কাছে অর্থহীন মনে হলেও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। গত কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে আমাদের অনেক প্রাণপ্রিয় সবচেয়ে বড় সাধক কৃষকদের মহামূল্যবান ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত ককেদিন ধরে ব্লক পরিদর্শন করছি। কৃষকের আর্তনাদ আমার বুকে তীরের মতো বিদ্ধ করেছে। কৃষকদের হায় হায় ধনীতে চারপাশ ভারী হয়ে আসছিল। এর কারণ যে শুধু বীজতলা বা রোপনকৃত ক্ষেত তা নয়। যে সময়ে এমনটি ঘটেছে সেই সময়ে আবারও বীজতলা তৈরি করে ধান লাগানো যায়। কিন্ত তারা সেই বীজতলাতে যে বীজ বপন করবন সেই বীজ কোথায় পাবেন? এই প্রশ্নটিই বার বার তারা করছিলেন আর হায় হায় করছিলেন। বর্তমানে চালের দাম বেড়েই চলেছে। তাদের জিজ্ঞাসা তাদের øাকায় প্রচুর ধান হয়। এবার যদি না হয় তাহলে তাদের জীবনে কষ্ট নেমে আসবে। আবার আসি সেই প্রথম প্রশ্নে “পানি বীজতলাকে ডুবায় না কৃষক বীজতলাকে ডুবায়?” আমি কয়েকদিন বিভিন্ন ব্লক ঘুরে যে বিষয়টি লক্ষ্য করেছি তা হলো বেশিরভাগ কৃষকই তাদের বীজতলা করেছে নিচু জায়গায়। ফলে মাত্র ৫-৬ দিনের ভারী বর্ষণেই তাদের সর্বনাশ। এই জন্য আমি কৃষককে দায়ী করতে নারাজ। আসলে আমরা যারা কৃষকদের সেবা দেয়ার কাজে ব্রত আছি তারা সেভাবে কৃষদের কাছে যেতে পারি নি। কৃষকদের বুঝাতে সক্ষম হই নি। যার জন্য আজ আমাদের এ ক্ষতি। আমাদের দেশের কৃষকরা অতি সহজ সরল। তাদের কাছে আমরা শিক্ষিত সমাজ যখন এগিয়ে যাই, তাদের সামনে হাজির হই তখন তারা অনেক খুশি হন। আমরা যা বলি তা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সেইভাবে কাজও করেন। যদি তাদের ভালো করে বোঝানো যেত যে আমন মৌসুম মানেই হলো বৃষ্টির সময়। এসময় ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বীজতলা করার সময় অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় করলে এ ধরণের ভয় থাকে না। তাছাড়া কৃষি আর আগের পর্যায়ে নেই। অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তি এসেছে। এখন বাড়ির ছাদেও বীজতলা তৈরি করা যায় এবং তা হচ্ছেও। ট্রে-পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি একটি অতি সাধারণ ব্যাপার। এ পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব। তাই আমাদের উচিত কৃষকদের সেই পরামর্শ দেওয়া যাতে কৃষক সামান্য বৃষ্টিতেও তার বীজতলা বা চারা একবারেই তার ঘরের কোণে তুলে রাখতে পারে। আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টাই পারে কৃষকদের রক্ষা করতে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে বীজতলাকে পানির উপরে ভাসাতে, পানির নিচে ডুবাতে নয়।
উত্তর সমূহ